গর্ভাবস্থায় আল্ট্রাসাউন্ড – কখন, কেন এবং কীভাবে করা হয়?
গর্ভাবস্থা একজন নারীর জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই সময়ের প্রতিটি দিন একজন মা নিজের শরীর এবং গর্ভের শিশুর জন্য অত্যন্ত যত্নবান হয়ে ওঠেন। একজন গর্ভবতী মা গর্ভে শিশুর বৃদ্ধি ঠিকভাবে হচ্ছে কিনা, কোনো জটিলতা তৈরি হচ্ছে কি না—এসব নিশ্চিত করার অন্যতম নিরাপদ ও কার্যকর উপায় হলো আল্ট্রাসাউন্ড (Ultrasound) পরীক্ষা।
এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো:
- আল্ট্রাসাউন্ড কী
- কখন ও কতবার আল্ট্রাসাউন্ড প্রয়োজন
- কেন এটি করা হয়
- ঝুঁকি ও সতর্কতা
- কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়
- বাংলাদেশে কোথায় ও কী খরচে এটি করানো যায়
🩺 আল্ট্রাসাউন্ড কী?
আল্ট্রাসাউন্ড একটি চিকিৎসা পরীক্ষা যেখানে উচ্চ-কম্পাঙ্কের শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে গর্ভের শিশুর ছবি তৈরি করা হয়। একে সনোগ্রাফি (Sonography) নামেও ডাকা হয়। এটি রেডিয়েশনবিহীন এবং সম্পূর্ণ নিরাপদ একটি প্রযুক্তি। গর্ভকালীন সময়ে এটি মায়ের গর্ভে শিশুর শারীরিক গঠন ও উন্নয়ন পর্যবেক্ষণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
📅 গর্ভাবস্থায় কতবার আল্ট্রাসাউন্ড করা হয়?
প্রায় সকল গর্ভাবস্থায় কিছু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আল্ট্রাসাউন্ড করা হয়। তবে গর্ভবতী নারীর স্বাস্থ্যের অবস্থা অনুযায়ী অতিরিক্ত স্ক্যানও লাগতে পারে।
✔️ গর্ভধারণ নিশ্চিত করা হয়
✔️ শিশুর হার্টবিট দেখা যায়
✔️ একাধিক ভ্রূণ আছে কি না, তা বোঝা যায়
✔️ গর্ভের স্থান (ইউটেরাসে সঠিকভাবে বসেছে কিনা) যাচাই করা হয়
✔️ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্ক্যান, যাকে Anomaly Scan বলা হয়
✔️ শিশুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, হাড়, হৃদপিণ্ড, কিডনি, মস্তিষ্ক ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করা হয়
✔️ শিশুর জেন্ডার (যদি আইনি সীমাবদ্ধতা না থাকে) জানা সম্ভব
✔️ শিশুর পজিশন (উপর, নিচ, বা পাশ) নির্ধারণ করা হয়
✔️ প্লাসেন্টার অবস্থান ও স্বাভাবিকতা যাচাই করা হয়
✔️ গর্ভে পর্যাপ্ত Amniotic Fluid আছে কিনা দেখা হয়
✔️ শিশুর ওজন ও বৃদ্ধির অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা হয়
✔️ সম্ভাব্য ডেলিভারির প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়
✅ বিশেষ পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত স্ক্যানের প্রয়োজন হতে পারে, যেমন:
- গর্ভকালীন ডায়াবেটিস
- উচ্চ রক্তচাপ
- পূর্ববর্তী গর্ভপাতের ইতিহাস
- রক্তক্ষরণ
- শিশুর গতি কমে যাওয়া
💡 আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে কী বোঝা যায়?
- শিশুর বয়স ও সম্ভাব্য প্রসবের তারিখ (EDD)
- শিশুর হৃদস্পন্দন
- শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি ও ওজন
- গর্ভের পানি (Amniotic fluid) পর্যাপ্ত আছে কি না
- প্লাসেন্টার অবস্থান (সামনে নাকি পেছনে)
- যমজ শিশু আছে কি না
- শিশুর শারীরিক গঠন স্বাভাবিক কি না
🧘♀️ স্ক্যানের আগে কী প্রস্তুতি প্রয়োজন?
- প্রথম ত্রৈমাসিকে অনেক সময় পূর্ণ মূত্রথলি (full bladder) প্রয়োজন হয়। স্ক্যানের ১ ঘণ্টা আগে ৩-৪ গ্লাস পানি পান করতে বলা হয়।
- ২য় ও ৩য় ত্রৈমাসিকে এই প্রয়োজন থাকে না।
- ঢিলেঢালা আরামদায়ক পোশাক পরা উচিত।
- স্ক্যানের আগেই চিকিৎসকের থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জেনে নেওয়া ভালো।

❓ আল্ট্রাসাউন্ড কি নিরাপদ?
আল্ট্রাসাউন্ড সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং এতে কোনো রকমের রেডিয়েশন থাকে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং American College of Obstetricians and Gynecologists (ACOG) একে গর্ভাবস্থায় নিরাপদ ঘোষণা করেছে।
তবে সতর্কতা:
- বিনা প্রয়োজনে বারবার স্ক্যান না করাই উত্তম।
- শুধু অভিজ্ঞ আল্ট্রাসনোগ্রাফার দ্বারা এটি করানো উচিত।
📍 বাংলাদেশে কোথায় করানো যায় এবং খরচ কত?
ঢাকা ও অন্যান্য শহরের প্রায় সব বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে আল্ট্রাসাউন্ডের সুবিধা রয়েছে।
মূল্য:
- সাধারণ স্ক্যান: ৫০০–১৫০০ টাকা
- বিস্তারিত স্ক্যান (Anomaly): ২০০০–৩৫০০ টাকা পর্যন্ত
💬 বিশেষ পরামর্শ
“গর্ভাবস্থায় আল্ট্রাসাউন্ড শুধুমাত্র শিশুর শারীরিক অবস্থার পর্যালোচনার জন্য নয়, বরং মা ও শিশুর সুস্থ ভবিষ্যতের নিরাপদ ভিত্তি।”
✅ আল্ট্রাসাউন্ড করার সুবিধা এক নজরে
🔸 গর্ভধারণ নিশ্চিত হওয়া
🔸 শিশুর স্বাভাবিক গঠন ও বৃদ্ধি যাচাই
🔸 অকাল প্রসবের ঝুঁকি চিহ্নিত
🔸 প্রসবের উপযুক্ত সময় নির্ধারণ
🔸 চিকিৎসকের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সহায়ক
📌 উপসংহার
গর্ভাবস্থায় আল্ট্রাসাউন্ড একটি অপরিহার্য ও নিরাপদ পরীক্ষা, যা শিশুর সঠিক বৃদ্ধি এবং মায়ের সুস্থতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। নিয়মিত ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী স্ক্যান করালে অনেক জটিলতা আগে থেকেই চিহ্নিত করা সম্ভব হয়।
📝 গুরুত্বপূর্ণ নোট:
এই আর্টিকেলটি আন্তর্জাতিক মেডিকেল জার্নাল ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের মতামতের উপর ভিত্তি করে তৈরি। এর উদ্দেশ্য শুধুমাত্র তথ্য প্রদান ও সচেতনতা বৃদ্ধি। এটি কোনও চিকিৎসা পরামর্শ হিসেবে বিবেচিত নয়।