পুষ্টি ও স্বাস্থ্য

৫০ বছর পেরোনো নারীদের জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস

পঞ্চাশের কোটা পার করার পর নারীদের জীবনে আসে নানা রকম পরিবর্তন — শরীর ও মন দুটোতেই। অনেকের মনে হতে পারে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খাবারদাবার নিয়ে খুব বেশি সচেতন থাকার প্রয়োজন নেই। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সুস্থ ও সক্রিয় থাকার জন্য এই বয়সে আরও বেশি যত্ন প্রয়োজন। খাদ্যাভ্যাসে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনলেই জীবনের এই পর্বটিও হয়ে উঠতে পারে আনন্দময়।

হাড়ের যত্নে ক্যালসিয়াম

পঞ্চাশের পর নারীদের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। এর ফলে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে এবং হালকা আঘাতেও সহজে ভেঙে যেতে পারে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় দুধ, দই, লাচ্ছি, বা দুধ দিয়ে তৈরি খাবার অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। পাশাপাশি, কাঁটাসহ ছোট মাছ, পালংশাক, ব্রকলি ও কাঠবাদাম থেকেও কিছুটা ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। তবে ক্যালসিয়াম শরীরে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি। তাই নিয়মিত সকালে কিছুক্ষণ রোদে থাকার অভ্যাস গড়ে তুলুন — অন্তত ২০ মিনিট করে প্রতিদিন।

লবণ কমান

বয়স বাড়ার সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ ও অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ এসব সমস্যার ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়। খাবারে আলাদা করে লবণ যোগ না করে খান এবং অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার — যেমন চিপস, চানাচুর, শুঁটকি, সস, মেয়োনেজ, প্রক্রিয়াজাত খাবার ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন। লবণের পরিমাণ কম রাখলে হৃদরোগ ও কিডনির সমস্যার ঝুঁকিও কমে।

শর্করা নিয়ন্ত্রণ করুন

ভাত, রুটি, আলু ইত্যাদি কম খাওয়ার চেষ্টা করুন। চাল, আটা বা ময়দা দিয়ে তৈরি ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন। অতিরিক্ত চিনি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। মধু বা গুড়ও চিনির স্বাস্থ্যকর বিকল্প নয়, তাই এগুলোকেও সীমিত রাখাই ভালো। এই অভ্যাস ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করবে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও কমাবে।

শরীর ঠান্ডা রাখার খাবার বেছে নিন

মেনোপজের পর হঠাৎ করে গরম লাগার অনুভূতি বা হট ফ্ল্যাশ হতে পারে। তাই এমন খাবার খান যা শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত পানি পান করুন এবং রসালো ফল ও সবজি যেমন লাউ, ঝিঙে, চালকুমড়া, ধুন্দুল, তরমুজ, ডাবের পানি, পাকা পেঁপে, পাকা বেল, শসা ও পুদিনাপাতা খাদ্যতালিকায় রাখুন। এতে শরীর ঠান্ডা থাকবে এবং প্রস্রাবের সংক্রমণের ঝুঁকিও কমবে।

আঁশের প্রয়োজনীয়তা

পঞ্চাশের পর হজমের সমস্যা অনেকেরই দেখা দেয়। এই সমস্যা কমাতে প্রচুর আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া জরুরি। রোজকার খাবারে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, যেমন মিষ্টিকুমড়া, কপি, পালংশাক এবং চালকুমড়া যুক্ত করুন। কলা ও বাদামেও আছে ভালো পরিমাণে আঁশ। এছাড়া গোটা শস্যজাত খাবার (whole grain) যেমন লাল চালের ভাত বা আটার রুটি খেতে পারেন। আঁশ রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় এবং হজমের গতি ঠিক রাখে।


উপসংহার

পঞ্চাশের পর নারীদের জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন শুরু হয় সঠিক খাদ্যাভ্যাস থেকে। শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী খাদ্য বাছাই করে এবং কিছু খাদ্যাভ্যাসে সামান্য পরিবর্তন এনে সুস্থ ও সুখী জীবন উপভোগ করা সম্ভব। নিজের প্রতি ভালোবাসা ও যত্নের এই অধ্যায়ে সচেতন হওয়া জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *