গর্ভাবস্থা

গর্ভধারণের প্রথম দিকের লক্ষণ ও করণীয়

গর্ভধারণের শুরুতে শরীরে বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে, যা অনেক সময় স্পষ্ট লক্ষণ হিসেবে প্রকাশ পায়। তবে এই লক্ষণগুলো সব নারীর ক্ষেত্রে একরকম নাও হতে পারে। আসুন জেনে নিই গর্ভধারণের প্রাথমিক কিছু সাধারণ ইঙ্গিত সম্পর্কে।

১. মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া

মাসিক বন্ধ হওয়াই সাধারণভাবে গর্ভধারণের সবচেয়ে প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। তবে সবসময় মাসিকের তারিখ মনে রাখা সম্ভব হয় না বা কিছু ক্ষেত্রে নিয়মিত মাসিক চলাকালীনও গর্ভধারণ হতে পারে। তাই অন্যান্য লক্ষণগুলোর দিকেও খেয়াল রাখা জরুরি।

২. বমিভাব ও মর্নিং সিকনেস

গর্ভধারণের শুরুতে, বিশেষ করে চার থেকে পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে, অনেক নারী সকালে ঘুম থেকে উঠেই বমিভাব বা বমি অনুভব করেন। এই অবস্থাকে ‘মর্নিং সিকনেস’ বলা হয়। যদিও এটি দিনের যেকোনো সময়েও হতে পারে।

৩. স্তনে পরিবর্তন

প্রথম সপ্তাহ থেকেই স্তন ফুলে যাওয়া, ব্যথা অনুভব করা কিংবা ভারী লাগা অনুভূত হতে পারে। শরীরের হরমোনের পরিবর্তনের কারণে এ ধরনের অনুভূতি দেখা দেয়।

৪. ক্লান্তি ও দুর্বলতা

গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে। হরমোনের পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ও কম খাওয়ার কারণে এ সমস্যা হয়।

৫. ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ

হালকা সাদা রঙের স্রাব গর্ভাবস্থার সাধারণ একটি দিক। এটি সাধারণত হরমোনের তারতম্যের কারণে হয়। তবে যদি ডিসচার্জের সঙ্গে দুর্গন্ধ, চুলকানি বা জ্বালা থাকে, তবে তা সংক্রমণের ইঙ্গিত হতে পারে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন।

৬. ক্ষুধামান্দ্য ও খাবারে অরুচি

অনেক নারী গর্ভাবস্থার শুরুতে তাদের পছন্দের খাবার থেকেও বিমুখ হয়ে পড়েন। কিছু খাবারের প্রতি অরুচি আবার কিছু খাবারের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষাও তৈরি হতে পারে।

৭. ঘন ঘন প্রস্রাব

গর্ভধারণের সময় শরীরে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কার্যক্রমও বাড়ে, ফলে ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ অনুভূত হয়। জরায়ু বড় হওয়ায় মূত্রথলিতে চাপ পড়ে এবং এই প্রবণতা আরও বাড়তে পারে।

৮. কোষ্ঠকাঠিন্য

হরমোন পরিবর্তনের প্রভাবে পরিপাক প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যেতে পারে, যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেয়। পর্যাপ্ত পানি পান ও আঁশযুক্ত খাবার খাওয়ার মাধ্যমে এ সমস্যা কমানো সম্ভব।

৯. মাথাব্যথা

হরমোনের তারতম্য এবং রক্ত সঞ্চালনের পরিবর্তনের ফলে গর্ভধারণের শুরুতে হালকা বা মাঝারি মাত্রার মাথাব্যথা হতে পারে।

১০. শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি

গর্ভধারণের কারণে প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বাড়ে, যার ফলে শরীরের তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে ঠান্ডা-জ্বর বা অন্য সংক্রমণের কারণেও তাপমাত্রা বাড়তে পারে, তাই সতর্ক থাকা দরকার।

করণীয়

  • গর্ভধারণের লক্ষণ অনুভব করলে প্রথমেই প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে নিশ্চিত হওয়া উচিত।
  • এরপর একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা গ্রহণ করা জরুরি।
  • খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন আনুন — কম তেল-মসলাযুক্ত, ভাজাপোড়া বাদ দিয়ে পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য খাবার খান।
  • ধূমপান, অতিরিক্ত ক্যাফেইন ও মদ্যপান থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন।
  • অল্প মাত্রার অস্বস্তি ঘরোয়া উপায়ে সামাল দেওয়া গেলেও, লক্ষণ তীব্র হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *