নবজাতকের ত্বকে র্যাশ? চিন্তার কিছু নেই!
নবজাতকের জন্মের পর অনেক সময় আমরা দেখতে পাই ত্বকে ছোট ছোট র্যাশ বা দাগ দেখা দিচ্ছে। এটা দেখে অনেকেই চিন্তিত হয়ে পড়েন। তবে এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক এবং অতি সাধারণ একটি অবস্থা—যার নাম এরিথেমা টক্সিকাম নিউনেটোরাম (Erythema Toxicum Neonatorum)।
অনেকেই এই নামটি শুনে ভয় পেতে পারেন, তবে চিন্তার কিছু নেই। এটি কোনো গুরুতর রোগ নয়, বরং নবজাতকের একটি স্বাভাবিক ত্বক প্রতিক্রিয়া।
🔍 এরিথেমা টক্সিকাম কী?
এরিথেমা টক্সিকাম নিউনেটোরাম হলো একটি সাধারণ ও ক্ষণস্থায়ী ত্বকের অবস্থা, যা নবজাতকের পেটে, পিঠে, মুখে বা শরীরের বিভিন্ন অংশে দেখা যায়। এটি দেখতে লালচে বা হলদেটে ছোট ছোট দানার মতো হতে পারে, মাঝে মাঝে কেন্দ্রস্থলে সাদা বা হলুদ রংয়ের অংশ থাকে।
এটি সংক্রামক নয়, কোনো অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া নয় এবং এতে শিশুর শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি চিকিৎসা ছাড়াই ভালো হয়ে যায়।

সাধারণত কেন হয়?
- ৩০-৭০% নবজাতকের মাঝে এটি দেখা যায়
- জন্মের ২-৩ দিনের মধ্যেই লক্ষণ প্রকাশ পায়
- ৫-৭ দিনের মধ্যে আপনি ভালো হয়ে যায়
উপসর্গ:
- ত্বকে লালচে ছোট ছোট ফুসকুড়ি বা র্যাশ
- দানাগুলো সাধারণত বুকে, পেটে, পিঠে বা মুখে দেখা যায়
- মাঝে মাঝে হালকা চুলকানি হতে পারে, তবে তা খুব সাধারণ
এটি কি বিপজ্জনক?
না, এটি মোটেও বিপজ্জনক নয়। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং নিজে থেকেই সেরে যায়।
📌 করণীয়:
- নবজাতকের ত্বক পরিষ্কার ও শুকনো রাখুন
- অপ্রয়োজনীয় ক্রিম বা অ্যান্টিসেপ্টিক ব্যবহার করবেন না
- শিশুর ত্বক ঘষা বা বারবার ধোয়া থেকে বিরত থাকুন
- যদি র্যাশের সাথে জ্বর, ত্বকে পুঁজ বা দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন দেখা যায়, চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
🌿 কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
- এটি চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে না
- কোনো দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কারণ নয়
- এটি প্রতিরোধের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই
- শিশুর শরীর নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করে বলেই এমন হয়
আরও কিছু প্রাসঙ্গিক তথ্য:
- এই র্যাশ সাধারণত শিশুর জন্মের সময়ই তার শরীরের ইমিউন সিস্টেম তৈরি হওয়ার প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা দেয়।
- অনেক সময় গর্ভাশয়ের বাইরের পরিবেশে প্রথমবারের মতো শিশুর মুখোমুখি হওয়ার পর তার ত্বকে এই প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
- এটি মূলত একটি ইনফ্ল্যামেটরি প্রতিক্রিয়া যা নিজে থেকেই সেরে যায়।
চিকিৎসকের পরামর্শ কখন নেবেন?
- যদি শিশুর র্যাশের সাথে সাথে জ্বর আসে
- র্যাশের মধ্যে পুঁজ দেখা যায় বা অতিরিক্ত চুলকানি হয়
- শিশুর খাওয়া বা ঘুমের সমস্যার সঙ্গে র্যাশ যুক্ত হয়
- র্যাশ এক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয় বা আরও খারাপ হয়ে যায়
মা-বাবার করণীয়:
- শিশু জন্মের পর প্রথম কয়েক দিন ত্বকের প্রতি খেয়াল রাখা গুরুত্বপূর্ণ
- প্রতিদিন পরিষ্কার জল দিয়ে শিশুকে মুছে রাখা উচিত
- বেবি প্রোডাক্ট ব্যবহার করার আগে পেডিয়াট্রিশিয়ানের পরামর্শ নেওয়া ভালো
- শিশুদের র্যাশে ঘরোয়া টোটকা বা নিজে নিজে ওষুধ ব্যবহার করা বিপজ্জনক হতে পারে
- ব্যবহৃত কাপড় যেন নরম হয় এবং ত্বকের সঙ্গে অতিরিক্ত ঘর্ষণ না হয়
✅ শেষ কথা:
নবজাতকের ত্বকে এরকম ফুসকুড়ি বা র্যাশ দেখা গেলে ভয় পাবেন না। এটি একটি অস্থায়ী, স্বাভাবিক অবস্থা। সঠিক যত্ন নিলে খুব দ্রুতই সেরে যাবে। তবে যদি ত্বকের অবস্থা অস্বাভাবিক মনে হয়, শিশুর স্বাস্থ্যে পরিবর্তন আসে, তখন অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
“এই লেখাটি আন্তর্জাতিক ও দেশীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণা এবং বিশেষজ্ঞ পরামর্শের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। এটি শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য, কোনো চিকিৎসা পরামর্শ নয়।”